শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন

নোটিশ :
✆ন্যাশনাল কল সেন্টার:৩৩৩| স্বাস্থ্য বাতায়ন:১৬২৬৩|আইইডিসিআর:১০৬৬৫|বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন:০৯৬১১৬৭৭৭৭৭
সংবাদ শিরোনাম
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গ গাজার মুসলিমদের আর কতভাবে নির্যাতন করলে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে! শেখ মুজিবুর রহমান- শুধু কোনো ব্যক্তির নাম নয়, তিনি স্বয়ং একটি প্রতিষ্ঠান পরৈকোড়া ইউনিয়ন সমিতি এখনও বলবৎ, একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে : সুজিত কুমার দাশ চাঁন্দগাও হামিদ চরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ১,আহত ১০ আনোয়ারায় কৈলাশ তীর্থ ধামে ৪দিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলা ও অষ্টপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্তন সহ শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অনন্য অবস্থানে সৈয়দপুর নুর কাশেম একাডেমি:প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তারা আনোয়ারাকে সমৃদ্ধ উপজেলায় পরিণত করবো:অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা চট্টগ্রামে দলবদ্ধ ধর্ষণে অসুস্থ প্রেমিকার মৃত্যু প্রেমিকসহ গ্রেফতার ২ : উপযুক্ত শাস্তি দাবী ঐতিহাসিক ৭ মার্চ : জাতির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরার দিক-নির্দেশনা

দখলে-দূষণে বিপন্ন কর্ণফুলী

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

এস এম ইরফান নাবিল :
দখলে দূষণে বিপন্ন কর্ণফুলী নদী। দুপাশে অবাধে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। প্রতিদিন দখল হচ্ছে নতুন নতুন অংশ। এ অবস্থায় দখল, দূষণ এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তীরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে নদী ও খাল রক্ষা পরিষদ। প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে মানববন্ধনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা।
একদিকে নির্বাচারে দখল, অন্যদিকে অবাধে দূষণ, সব মিলিয়ে বিপন্ন কর্ণফুলী নদী। গত কয়েক বছর ধরে কমছে নাব্য, নদীর দুপাশে জেগে উঠছে দীর্ঘ চর। জোয়ারের সময় চলাচলে সমস্যা না হলেও ভাটার সময় চরে আটকে যায় নৌকাসহ সব নৌযান। সংকুচিত হতে হতে নদীর প্রস্থ ঠেকেছে অর্ধেকে।
এর সাথে আবার নদী ভরাট করে দুই পাড়ে নির্মিত হয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। হাইকোর্টের নির্দেশে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযান চললেও এখন তাও বন্ধ। তাই দখল দূষণ এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে নদী তীরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে নদী ও খাল রক্ষা পরিষদ।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান জানালেন, এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে কর্ণফুলী তীরের ৫২৮ প্রজাতির গাছ। নদীর অস্তিত্বও বিপন্ন হওয়ার পথে।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী, বন্দরনগরের ৭০ লাখ মানুষের সুপেয় পানি, লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা মিলে মহাযজ্ঞ কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে।
মাত্রাতিরিক্ত দখল, দূষণ, ভরাটের বিপরীতে নদীশাসন না থাকায় দেশের লাইফলাইন খ্যাত কর্ণফুলী এখন বিপন্ন।
এ নদী বাঁচাতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন চান বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকার ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রায় ১০ একর উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। উচ্ছেদ করা জায়গা ফের বেদখল হলে সম্প্রতি পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন।
কিন্ নানান কারণ ও সীমাবদ্ধতায় দুই তীরে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি এখনো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ড্রেজিং করে জেটিতে জাহাজ আনা-নেওয়ার চ্যানেল ঠিক রাখলেও নদীর তলদেশে মাত্রাতিরিক্ত পলিথিন ও কঠিন বজ্যের্র কারণে ড্রেজিংয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে ড্রেজিং করে সদরঘাটের নতুন জেটিগুলোতে জাহাজ আনা-নেওয়ার উপযোগী করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে চলছে ড্রেজিং কার্যক্রম।
‘ইতিহাস ঐতিহ্যে কর্ণফুলী’ বইয়ের লেখক, চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান দৈনিক সমরকে বলেন, কর্ণফুলীর দুই পাড়ে ২ হাজার ১৮১টি সরকারি-বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। খালগুলো দিয়ে যাতে গৃহস্ালি বজর্য, পলিথিন নদীতে পড়তে না পারে, বেলে মাটির পাহাড় বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাতে নদীতে পলি জমতে না পারে সে জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিলট্রেপ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, নদী জীবন্ত সত্তা। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন চিকিৎসা দরকার তেমনি নদীরও শাসন, পরিচর্যা দরকার। কর্ণফুলী এখন মুমূর্ষু, বিপন্ন, অরক্ষিত। বড় সুনামি বা জলোচ্ছ্বাস হলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ এ নগরকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তাই জরিপ অনুযায়ী নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
‘নদী কমিশন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিআইডবি­উটিএ, সিটি করপোরেশন, নদী গবেষকসহ সংশি­ষ্টদের সমন্বয়ে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মৃতপ্রায় কর্ণফুলীকে বাঁচানো সম্ভব। ’
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক সমরকে বলেন, নানা কারণে কর্ণফুলীর পানি ধারণক্ষমতা ও উজান থেকে মিঠা পানির প্রবাহও নানা কারণে কমছে। এতে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। এর ফলে একদিকে কর্ণফুলীর প্রধান শাখা নদী, কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদার পানিতেও লবণাক্ততা বাড়ছে, হুমকির মুখে পড়ছে মা-মাছ।
‘অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের ৭০ লাখ মানুষকে ওয়াসা প্রতিদিন যে কোটি কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিচ্ছে তাতেও লবণাক্ততার হার বাড়ছে। বাধ্য হয়ে মদুনাঘাটের পাশাপাশি কর্ণফুলীর রাঙ্গুনিয়া অংশ থেকে পানি আনতে হচ্ছে ওয়াসাকে।’
তিনি বলেন, কর্ণফুলী বাঁচিয়ে রাখতে হলে মেগা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। হালদার উজানে, রাঙ্গুনিয়ায় যেসব রাবার ড্যাম আছে তা কেটে দিতে হবে। কাপ্তাই হ্রদের পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি টারবাইন সারা বছর চালু রাখতে হবে। যাতে শুষ্ক মৌসুমেও কর্ণফুলীতে পানির প্রবাহ থাকে। নয়তো জোয়ারের পানিতে লবণাক্ততা বাড়তেই থাকবে।
কর্ণফুলী গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী দৈনিক সমরকে বলেন, কর্ণফুলী হচ্ছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূলধন। এটি শুধু বাংলাদেশের ঐতিহ্য নয় একটি অর্থকরী নদীও। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের সব কনটেইনার জাহাজগুলো কিন্ এ নদী দিয়েই আসা-যাওয়া করছে। তাই এ নদীকে পরিচর্যা করতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক ও যৌক্তিক উপায়ে। আমরা সাদা চোখে দেখছি, নদীর দুই পাড়ে নানাভাবে, নানা অজুহাতে দখল হচ্ছে। নদীর জায়গায় স্ায়ী স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। মাছসহ জলজ প্রাণীর অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাজার হাজার লাইটার জাহাজ কর্ণফুলী নদীকে টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। লাইটার, ট্যাংকার, কনটেইনার শিপ, ট্রলারের জ্বালানি তেল, তৈলাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে। ৭০ লাখ মানুষের একটি শহরের মানব, গৃহস্থালি বজ্যের ভাগাড় হয়েছে কর্ণফুলী নদী। নদীপাড়ের ৩০০ ছোট বড় কারখানার বজর্য, নগরের ১৭টি শিল্প জোনের কারখানাগুলোর বজর্য হয় সরাসরি নয়তো জোয়ারের পানির সঙ্গে এ নদীতে এসে পড়ছে। এভাবে ক্রমে নদীটি মরে যাচ্ছে। এ নদী বাঁচাতে হলে কী করতে হবে কী করা উচিত সেটি কম বেশি সবাই জানে। কিন্তু সেই পথে নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর, নগর, কর্ণফুলী, হালদা এবং নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বাঁচাতে হলে লোক দেখানো কাজ নয়, আন্তরিকতা চাই।
কর্ণফুলীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে নগরের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ নিম্নাঞ্চল। জোয়ারের পানিতে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও আসাদগঞ্জের ৫ হাজার দোকান, আড়ত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আড়ত বা দোকানের মেঝে উঁচু করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। পানি ঢুকছে, পণ্যসামগ্রী ভিজে নষ্ট হচ্ছে। দিনে রাতে উদ্বেগ বাড়ছে। সড়কে হাঁটুপানি থাকায় বিকিকিনি বন্ধ থাকে এ সময়।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরে জলাবদ্ধতা সংকট নিরসন হবে। শুধু যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি তা নয়, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটুপানি জমে রোগী, চিকিৎসক, স্বজনসহ সংশি­ষ্টদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বকশিরহাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এম জামাল হোসাইন দৈনিক সমরকে বলেন, কর্ণফুলীকে গলাটিপে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। নদীর উত্তর পাড়ে যে বিস্তীর্ণ এলাকা ড্রেজিংয়ের বালু, বজর্য দিয়ে ভরাট করা হয়েছে এতে জোয়ারের সময় নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। লোহার সেতু, পিলার সেতুর কারণেও নদী ভরাট হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে না দিলে এ নদী বাঁচানো যাবে না।

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য লিখুন


Archive

© All rights reserved © 2021 Dainiksomor.net
Design & Developed BY N Host BD