বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন

নোটিশ :
✆ন্যাশনাল কল সেন্টার:৩৩৩| স্বাস্থ্য বাতায়ন:১৬২৬৩|আইইডিসিআর:১০৬৬৫|বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন:০৯৬১১৬৭৭৭৭৭
সংবাদ শিরোনাম
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গ গাজার মুসলিমদের আর কতভাবে নির্যাতন করলে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে! শেখ মুজিবুর রহমান- শুধু কোনো ব্যক্তির নাম নয়, তিনি স্বয়ং একটি প্রতিষ্ঠান পরৈকোড়া ইউনিয়ন সমিতি এখনও বলবৎ, একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে : সুজিত কুমার দাশ চাঁন্দগাও হামিদ চরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ১,আহত ১০ আনোয়ারায় কৈলাশ তীর্থ ধামে ৪দিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলা ও অষ্টপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্তন সহ শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অনন্য অবস্থানে সৈয়দপুর নুর কাশেম একাডেমি:প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তারা আনোয়ারাকে সমৃদ্ধ উপজেলায় পরিণত করবো:অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা চট্টগ্রামে দলবদ্ধ ধর্ষণে অসুস্থ প্রেমিকার মৃত্যু প্রেমিকসহ গ্রেফতার ২ : উপযুক্ত শাস্তি দাবী ঐতিহাসিক ৭ মার্চ : জাতির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরার দিক-নির্দেশনা

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বঙ্গবন্ধুঃ-“তোমাদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না”;বৃথা যায় নি।

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

এস এম ইরফান নাবিলঃ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিন তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর তার মুক্তি ও দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে সারা দেশেই উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল। তার দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আনন্দ অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে মানুষ যেন পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের দেখা পেয়েছিল সেদিন। বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।
সেই বৃষ্টিস্নাত বিকালে, বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন ঢাকার রাস্তায় আনন্দ-অশ্রুতে উদ্বেলিত হতে থাকে লাখ লাখ জনতা। তাকে একনজর দেখে বুকে সাহস ফিরে পায় জাতি। ফিরে এসেছেন জাতির পিতা। বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। একদিকে বিজয়ের আনন্দ, অন্যদিকে স্বজন হারানোর বেদনায় কাঁদছিলেন বঙ্গবন্ধু। আরেক দিকে, বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন।
এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। সেদিনই তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। সেখানে দুদিন অবস্থান করে ১০ জানুয়ারি দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে সফলতার পথ ধরে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথে আরো সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারব। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলছে, সেটাই আওয়ামী লীগ সরকারের পরম পাওয়া। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল একদিন এ দেশের মানুষ নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করবে। সে লক্ষ্যেই তিনি গোটা জাতিকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ভিনদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে নয়, জাতির পিতার স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলছে।
পাকিস্তান যেন বঙ্গবন্ধুর তথাকথিত বিচার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তিনি যেন সসম্মানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। শুধু মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশেই দাঁড়ানো নয়, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রশ্নেও তিনি ছিলেন অবিচল, অনমনীয়। শেখ মুজিবের মুক্তিকে বাংলাদেশ সংকট সমাধানের অন্যতম প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে গোটা বিশ্বে প্রবল প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধী এতটাই অনমনীয় ছিলেন যে, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জয়লাভের পরেও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তার যুদ্ধ থামবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, হোয়াইট হাউজে ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ৪ নভেম্বর ১৯৭১। সেই বৈঠকের মূল প্রসঙ্গ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হয়। নিক্সন ও কিসিঞ্জার বিলক্ষণ অনুধাবন করেন, ইন্দিরা গান্ধীকে বাগে আনা যাবে না, বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি একচুলও ছাড় দেবেন না। কার্যত বাংলাদেশ প্রশ্নে লাগাতার চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা এবং ওয়াশিংটনের দুর্ভাগ্যজনক পাকিস্তানপন্থি কৌশলগুলো অকার্যকর পরিণত করেন ইন্দিরা গান্ধী। তার যুক্তি, দৃঢ়তা এবং বিস্ময়কর আন্তর্জাতিক জনসংযোগের ফলে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের পক্ষে আসে। এদিকে, ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তাদের সরকারের কাছে দুটি সুপারিশ পাঠায়। ১. দ্রুত বাংলাদেশ সরকারকে মেনে নেওয়া এবং ২. অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। সেখানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে তিনি ফিরে আসেন বাংলার মানুষের মধ্যে।
জাতির পিতা পাকিস্তান কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারির ভোরবেলা। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে একই বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। পরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে দেখা করেন বঙ্গবন্ধু। পরদিন রাতে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে ৯ জানুয়ারি রাতে দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি এবং সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান।
১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ঢাকা পৌঁছান। প্রিয় নেতাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান।
বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি, বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
তিনি বলেছিলেন, ‘এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না, যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না, যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের যুবক যারা আছে, তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই, তোমরা গেরিলা হয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।’
ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরো বলেছিলেন, ‘যারা দালালি করেছে, যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে। তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, এক জনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই, স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে।’

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য লিখুন


Archive

© All rights reserved © 2021 Dainiksomor.net
Design & Developed BY N Host BD