বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

নোটিশ :
✆ন্যাশনাল কল সেন্টার:৩৩৩| স্বাস্থ্য বাতায়ন:১৬২৬৩|আইইডিসিআর:১০৬৬৫|বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন:০৯৬১১৬৭৭৭৭৭
সংবাদ শিরোনাম
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসহাক এর দাফন সম্পন্ন ঈদ মুবারক চট্টগ্রামে একুশের কণ্ঠ’র ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত বান্দরবানে কম্বিং অপারেশন শুরু : সেনাপ্রধান শবেকদর সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে যা বলা হয়েছে মক্কায় ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আবদুল হাকিমের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আমুচিয়া ইউনিয়নের ইমাম, মোয়াজ্জিনদের মাঝে প্রবাসী এমদাদুল ইসলামের ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ জেলা প্রশাসকের নিকট বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ’র স্মারকলিপি প্রদান বোয়ালখালীতে জোরপূর্বক জায়গা দখলের পাঁয়তারা অনেকটা অভিমান নিয়েই যেন চলে গেলেন মোহাম্মদ ইউসুফ : ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া

যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

ইরফান নাবিল:

আমাদের সবার পরিচিত একটি বাক্য হচ্ছে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। শিক্ষা ছাড়া কোনো দেশ বা জাতি উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে না। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। কথাটি ঠিক যেমন বাস্তব, তেমনি অবাস্তবও বটে। কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও যে বিভক্তি রয়েছে। আর সেগুলো হচ্ছে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা।
শহরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিকতর। এখানকার শিক্ষার্থীরা যেমন অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে, তেমনি অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুযোগও পাচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ভিন্ন চিত্র। তারা যেমন এখানে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার সুযোগ কম পাচ্ছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিভিন্ন কম্পিউটার কোর্স, ইংলিশ স্পিকিংসহ আরো নানা ধরনের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন থেকে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। আর এসব বিষয়গুলোতে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। ফলে, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে আর এগিয়ে যাচ্ছে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। অনেকগুলো কারণে শহরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে। যেমন হচ্ছে পর্যাপ্ত জবাবদিহিতার অভাব। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে সচেতন নয়। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু শিক্ষক রয়েছেন। তারা যখন ইচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে আবার চলে যায়। বলতে গেলে কোনো দায়িত্ববোধ নেই। কিন্তু শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। শহরাঞ্চলে পর্যাপ্ত জবাবদিহিতা আছে বলে, তারা তাদের দায়িত্ববোধ সঠিকভাবে পালন করে। ফলে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জন করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন করতে হবে ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সচেতন হতে হবে।
শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যথেষ্ট বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে তাকাই তাহলে এর বিপরীত দিক ফুটে উঠবে। এখানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব রয়েছে। ফলে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের থেকে পিছিয়ে পড়ছে ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এজন্যই গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করতে হবে ও তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন ছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব নয়।
গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ার অন্যতম আরও একটি কারণ প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষার সুযোগ না থাকা। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। যদিও থেকে থাকে, তবে সেটা খুব নগণ্য। তাও যে সেটা খুব কার্যকরী, এমনটা কিন্তু নয়। অথচ শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্র্যাক্টিক্যাল বা ল্যাবরেটরি ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষা অর্জন করতে পারছে আর গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে চাই গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থার পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা।
গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। শুধু অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কার্যক্রম। অথচ শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট, সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষা নিয়ে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের যথার্থ মেধা যাচাই করতে পারছে। এ দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। তাই শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যায় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার অভাব রয়েছে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও টুর্নামেন্টসহ আরো অনেক কিছু। এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ফলে, শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে। অথচ গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ পাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা সফরের আয়োজন বা উদ্যোগ নেই বললেই চলে। অথচ শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রত্যেক বছর শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পর্যটন অঞ্চলগুলোতে গিয়ে বাইরের জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এতে তারা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় এগিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা সফর ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ করে দিতে হবে।
শহরাঞ্চলের অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে যেমন সচেতন, তেমনি গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে সচেতন নয়। যেহেতু শহর ও গ্রাম্য মধ্যকার একটি প্রবল আয় বৈষম্য রয়েছে। তুলনামূলক বেশি আয়ের কারণে শহরাঞ্চলের একজন অভিভাবক তার সন্তানকে যেভাবে প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকের পক্ষে সেটি বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ভালো প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ের সহজলভ্যতা, পর্যাপ্ত শিক্ষাপোকরণের প্রাপ্যতা, প্রযুক্তিগত সহায়কসহ সবদিক দিয়েই শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকে।

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য লিখুন


Archive

© All rights reserved © 2021 Dainiksomor.net
Design & Developed BY N Host BD