মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন

নোটিশ :
✆ন্যাশনাল কল সেন্টার:৩৩৩| স্বাস্থ্য বাতায়ন:১৬২৬৩|আইইডিসিআর:১০৬৬৫|বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন:০৯৬১১৬৭৭৭৭৭
সংবাদ শিরোনাম
শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে হলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরতে হবে:খোরশেদ খন্দকার বোয়ালখালীর চরণদ্বীপে আওয়ামী লীগ পরিবারের উদ্যোগে বিজয় মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত আধুনিক কালুরঘাট সেতু নির্মাণে সচেষ্ট থাকব:আবদুচ সালাম বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে হরতাল বিরোধী মিছিল অন্য প্রার্থী মানিনা : মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়ার কান্ডারী আনোয়ারায় জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ভূমিমন্ত্রী জাবেদ এমপি আল ফালাহ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)ও ফাতেহা-এ ইয়াজদাহুম অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামে আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন যারা সিজেকেএস নির্বাচনে হাড্ডাহড্ডি লড়াই: অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদ সৈয়দ সাহাব উদ্দিন শামীম এর জয় লাভ সিজেকেএস নির্বাচন : দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কজে লাগিয়ে ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজাবো : সৈয়দ সাহাব উদ্দিন শামীম

৯০ বছর বয়সী মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট সেতুটির এখন মরণদশা

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

আবদুল্লাহ আল সায়ীদ : কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেলসেতুটি নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয় ১৯১৪ সালে। সে সময় ব্রিটিশরা বার্মায় সৈন্য আনা-নেওয়ার কাজে এটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩০ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭১-এ সেতুটির উত্তর ও পশ্চিম পাশে ঘাঁটি করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল মুক্তিবাহিনী। ৯০ বছর বয়সী মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটির এখন মরণদশা। তবু ঝুঁকি ও ভোগান্তি মাথায় নিয়ে দিনে প্রায় ১ লাখ লোক এই সেতু ব্যবহার করে যাচ্ছে। একমুখী কালুরঘাট সেতুর স্থানে নতুন করে একটি দ্বিমুখী সড়ক ও রেলসেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পূর্ব পটিয়া, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, শহরের চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল। কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম পাশ (শহর এলাকা) থেকে বোয়ালখালী সদর গোমদন্ডির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। কিন্তু ১০ মিনিটের এই পথ যেতে এখন সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সেতুতে ওঠার জন্য সব সময় দুদিকে গাড়ির দীর্ঘ সারি থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় রেলওয়ে সেতুটিকে ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল গবেষকও এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দেয়। সেতুর পূর্বপাশে দুটি সাইনবোর্ড দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একটিতে লেখা ১০ টনের অধিক মালামাল পরিবহন নিষেধ। অপরটিতে লেখা, এই সেতুর ওপর দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল নিষেধ। আদেশ অমান্যকারীকে ফৌজদারিতে সোপর্দ করা হবে। গত সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার ঘটনা। পশ্চিম পাশ (শহরের দিক) থেকে গাড়ি সেতুতে উঠে গেছে। সেতুর মাঝামাঝি গিয়ে একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। সেতুর ওপর বাস, ট্রাক, টেম্পো, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ঠাঁইয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ যাত্রীদের কয়েকজন গেটকিপার নূর হোসেনের সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। কেন ভারী ট্রাক সেতুতে উঠতে দিল এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি। এক যাত্রী বলেন, ন ফাইলে ছঁরি ছাড়ি দে। তোরে হনে হইয়ে ওভারলোড টেরাক
তুলিবারলেই। (কে বলেছে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক তুলবার জন্য। না পারলে চাকরি ছেড়ে দে।) নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সেতুটির বয়স হয়েছে। ট্রেন চলাচলে সমস্যা নেই। যত সমস্যা বড় গাড়িতে। আমরা ১০ টন বেঁধে দিয়েছি। কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ টন নিয়ে গাড়ি চলছে।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত দুবার করে যাওয়া আসা করে। এ ছাড়া দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেল পরিবহন করে অপর একটি মালবাহী ট্রেন। তবে ফার্নেস তেলের ওজনে সমস্যা হয় না বলে দাবি রেলওয়ের।
জানা গেছে, এ সেতু বারবার সংস্কার-মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়। এ সময় ১১ মাস সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। গত কয়েক বছর আগে জাহাজের ধাক্কায় একটি স্প্যান সরে যায়। ওই সময় দুদিন বন্ধ রেখে তা ৫০ লাখ টাকায় মেরামত করা হয়। এর আগে
একাধিক দফায় সেতুর সংস্কার করা হয়। বোয়ালখালী ও পটিয়ার তিন ইউনিয়নের প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই সেতুর ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। এ ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটের গাড়িও এই সেতু দিয়ে বিভিন্ন সময় চলাচল করে। সেতুর পূর্ব পাড়ে বোয়ালখালী অংশে প্রায় ৫০টি কলকারখানা রয়েছে। সেতু নড়বড়ে হওয়ায় এসব কারখানা পণ্য পরিবহন করতে পারে না। তারা তৃতীয় কর্ণফুলী
সেতু (শাহ আমানত সেতু) ব্যবহার করে। এতে খরচ বাড়ে। এদিকে কর্ণফুলী নদীর ওপর আরও একটি নতুন সেতু নির্মাণে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর কাজ ও চলছে বলে জানা গেছে। কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণে উঁচু-নিচুর যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে তা নিরসন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নতুন নকশায় নির্মাণ করা হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত এই নতুন সেতু। নতুন নকশা প্রণয়ন শেষ হয়েছে। নকশা অনুযায়ী, মূল সেতুর দৈঘর্য হবে আগের মতোই, প্রায় এক কিলোমিটার। তবে সেতুর দুই পাশে দুই কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার ভায়াডাক্টসহ পুরো সেতুটির দৈঘর্য হবে পাঁচ কিলোমিটার। তবে নির্মাণ কাজ শুরুতে বিলম্ব এবং আগের চেয়ে বেশি উচ্চতায় সেতু করতে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে চারগুণ। শুর“র দিকে এক হাজার কোটি টাকায় সেতু নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে চার হাজার কোটি টাকার ওপরে।
ভায়াডাক্ট হলো সেতুর মতোই এক ধরনের সেতু। পিলার ও স্প্যানের মাধ্যমে ভায়াডাক্ট সেতু নির্মাণ করা হয়। সাধারণত সেতুর উচ্চতা বেশি হলে ট্রেনকে সেই উচ্চতায় চালাতে ভায়াডাক্টের মাধ্যমে অনেক দূর থেকে একটু একটু করে সমান্তরাল করার মাধ্যমে মূল সেতুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালাতেও এ ধরনের ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে পৃথক সড়ক ও রেলসেতু হবে, নাকি রেল কাম সড়ক সেতু হবে? সেই সেতু কি সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় করবে নাকি রেলপথ মন্ত্রণালয় করবে- এ নিয়ে বিভিন্ন সময় জটিলতা দেখা দেয়। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ই সেতুটি নির্মাণ করছে এবং সেতুটি হচ্ছে রেল কাম সড়ক সেতু। আগে বর্তমান সেতুর দক্ষিণে নতুন সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও এখন সেটি উত্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।সাত দশমিক ২ মিটার উচ্চতায় সেতুটি নির্মাণ করতে চেয়েছিল রেলওয়ে। সেভাবে নকশাও প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে তাতে আপত্তি জানায় বিআইডবিউটিএ। এখন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে ১২ দশমিক ২ মিটার উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন করে নকশা প্রণয়ন করছে কোরিয়ান ইউশিন নামে এক প্রতিষ্ঠান।কালুরঘাট সেতু প্রকল্পের পরিচালক ও রেলওয়ের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) গোলাম মোস্তফা বলেন, নতুন নকশা অনুযায়ী ১২ দশমিক ২ মিটার উচ্চতায় নির্মাণ করা হবে কালুরঘাট নতুন সেতু। এতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। রেলের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭৬০ মিটার বা প্রায় এক কিলোমিটার। নতুন মূল সেতুর দৈর্ঘ্যও হবে পুরোনো সেতুর সমান। ভায়াডাক্টসহ পুরো সেতু হবে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে কাজ শুর“ করে ২০২৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে একনেকের এক বৈঠকে নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ার পর কার্যত সেই উদ্যোগ বাঁধাগ্রস্ত হয়। নতুন নকশায় সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে দাতা দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নানা জটিলতায় কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া হোঁচট খাচ্ছিল। সর্বশেষ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একটি গেজেট এই সেতু নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ওই গেজেটে দেশের সব নদীকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গোমতী, কর্ণফুলীসহ কয়েকটি প্রধান নদীকে প্রথম শ্রেণিভুক্ত করা হয়।

ফেইসবুকে নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য লিখুন


Archive

© All rights reserved © 2021 Dainiksomor.net
Design & Developed BY N Host BD