মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০১:২৬ অপরাহ্ন
সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকারপুত্ররা ‘আমি রাজাকারপুত্র’ বলে যে দম্ভ প্রচার করছে তা ভেঙে দিতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
বুধবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি নোয়াখালী জেলা পুলিশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা হতভম্ব হই, যখন দেখি রাজাকার পুত্ররা দম্ভের সঙ্গে চিৎকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছে, আমি রাজাকার পুত্র। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে এ রাজাকারের পুত্র-সন্তানরা কীভাবে এ দুঃসাহস পায়; যারা বাংলার মাটিতে দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম হরণ করেছে, লাখ লাখ মানুষকে খুন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে।
এ ‘দম্ভ চূর্ণ’ করতে তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
এই অনুষ্ঠান থেকে নোয়াখালী জেলা পুলিশ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য ‘নির্ভিক’, নবনির্মিত সুধারাম মডেল থানা, সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ লাইন্সে নারী ব্যারাক ভবন উদ্বোধন এবং ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের মোঙক উন্মোচন করা হয়।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তার আহ্বানে সাঙা দিয়ে পূর্বসূরিরা যে দেশটিকে আমাদের জন্য উপহার দিয়েছেন, তাদের যে অনবদ্য আত্মত্যাগ, সে আত্মত্যাগের মর্যাদা ধরে রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। এটি একটি ঐতিহাসিক দায়, একটি ঐতিহাসিক কর্তব্য।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ যে দুর্নিবার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিল। আমাদের সেই অহংকারের জায়গাগুলোকে আরও সুসংহত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের পুস্তক, ভাস্কর্য হতে পারে অন্যতম নিয়ামক। যাতে আমরা কখনও ইতিহাস বিস্মৃত না হই।
বেনজীর আহমেদ বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের যে অবদান, ভূমিকা রয়েছে তা দুটি কারণে ডকুমেন্টেড হওয়া দরকার। একটি হলো জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ হিসেবে এবং অপরটি হলো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।
আইজিপি বলেন, পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি যে যেখানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে যে বীরত্বগাথা রচিত হয়েছে, তা তুলে আনতে হবে। বাঙালি জাতির উত্তরণের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের যে ভূমিকা রয়েছে তা ডকুমেন্টেড হতে হবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে এগুলোকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে ডকুমেন্টেড করতে হবে, যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এর মর্যাদা অনুভব করতে পারে, অহংকার করতে পারে, একটা মর্যাদাবান জাতি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারে।’ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান আইজিপি।
এ সময় নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সভাপতি হাবিবুর রহমান, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা নোয়াখালী জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার শহিদ আব্দুল হাকিমের মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজি এস এম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত আইজি মো. মাজহার“ল ইসলাম, এটিইউ’র অতিরিক্ত আইজি মো. কামরুল আহসান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে আইজিপি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য ‘নির্ভীক’, নোয়াখালী জেলা পুলিশের নবনির্মিত সুধারাম মডেল থানা, সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ লাইন্স নারী ব্যারাক ভবন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ-নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রকাশিত বইটি সম্পাদনা করেছেন মো. আলমগীর হোসেন। গবেষণায় ছিলেন এ কে এম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, আবু নাছের মঞ্জু ও মো. এনায়েত করিম।
আপনার মন্তব্য লিখুন