সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
শহীদুল্লাহ কায়সার টিপু:
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শক্তিশালী ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকার ১০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে, প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে ২ লাখ মানুষের। ভূমিকম্প কবে হবে না হবে, সেজন্য ভবন নির্মাতারা টাকা খরচ করতে নারাজ। সাধারণত একটি ভবন নির্মাণে যেখানে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে ভবন ও ফ্ল্যাট মালিকরা সৌন্দর্যবর্ধনে ২৫ কোটি টাকা খরচ করতে রাজি। এছাড়া কেউ কেউ তো নিজের ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের জন্য কোটি টাকা খরচ করে থাকেন। অথচ ভবনের ত্রুটি বা ভূমিকম্প সহনীয় ব্যবস্থাপনা সংশোধনে মাত্র ২০ লাখ টাকা খরচ করতে চান না।
স্থপতি ও কাঠামো প্রকৌশলীরা বলেন, নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে আরসি ব্রেসিং বা সিয়ার ওয়াল বা উইং ওয়াল সঠিকভাবে নির্মাণ করা হলে অনেক কম খরচে ত্রুটিমুক্ত ভবন তৈরি হতে পারে। ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ডের হিসাব, খুব বেশি হলে এক থেকে দেড় মিনিট। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যা ঘটার তা ঘটে যায়। বহুতল ভবনে অবস্থান করলে এত অল্প সময়ে তাড়াহুড়ো করে আসলে কেউই বের হতে পারবে না। কাজেই ভবনের শুধু সৌন্দর্যবর্ধনে নয়, সুরক্ষায় ব্যয় বাড়ানো বেশি জরুরি।
সম্প্রতি কয়েক দিনের ব্যবধানে সিলেট অঞ্চলে উপর্যুপরি ভূমিকম্প মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এ অঞ্চলে ভূমিকম্প-আতঙ্ক থাকলেও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। কোনো নিয়মনীতি বা বিল্ডিং কোড না মেনেই গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। টানা ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সিলেটের ঘটনায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দেশের নাগরিক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের।
গত ২৯ মে একদিনে (সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা) কমপক্ষে পাঁচবার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সিলেট। পরদিন ভোরে আবার ভূমিকম্প হয়। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের দেশে ব্যাপক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জর“রি। যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে সব ভবনের ভূমিকম্প প্রতিরোধ সক্ষমতা যাচাই করা উচিত। পূর্বপ্রস্তুতিই ভূমিকম্প মোকাবিলার একমাত্র পন্থা। দুর্যোগের সময় না ঘাবড়ে সচেতনভাবে মোকাবিলা করার মাধ্যমেই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। অতিরিক্ত মাটি কর্ষণ, পরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ না করা, বিল্ডিং কোড না মানার পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
ভারতের মেঘালয়ের শিলং থেকে সিলেট হয়ে ভুটান পর্যন্ত ভূগর্ভে যে চ্যুতি আছে, তাতে বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে। সেটি মৃদু ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৬ সালে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার জিওসায়েন্সে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের কিছু অংশজুড়ে একটি সুবিশাল চ্যুতির (ফল্ট) কারণে ভূগর্ভে যে শক্তি জমা হয়েছে, তাতে সিলেট অঞ্চলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। ওই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের একটি দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক যুক্ত ছিলেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কিছু ভবন ভেঙে না ফেলে সাপোর্টিং পাওয়ার দিয়ে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসাবে ভবনগুলোকে গড়ে তোলা যেতে পারে। দেশে যে হারে ত্রুটিপূর্ণ নকশায় পাকা ভবন, রাস্তা ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অকল্পনীয়। তাই সবাইকে আইন মেনে ভবন নির্মাণে সচেষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে
আপনার মন্তব্য লিখুন