মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
আলহাজ্ব সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম, সম্পাদক দৈনিক সমর:
বাংলাদেশে দাবা পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। বর্তমান কমিটি দাবা খেলার অগ্রগতিতে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এতে সফলতা বয়ে এনেছে। বিশেষ করে যার কথা না বললে এই লেখাটার কোনো মুল্যায়ন হবে না। যার অবদান অনেক বেশী । দাবা খেলাকে দেশে এবং বিদেশে উল্লেখযোগ্য অবদান এবং উৎসাহ যুগিয়েছেন তিনি হলেন সাবেক সফল আইজিপি ড.বেনজির আহমেদ।যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। থিতিয়ে যাওয়া দাবাকেও তুলে এনেছেন মূলধারায়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছেন উদ্যমী ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে। পেয়েছেন দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলে প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হওয়ার সম্মান। তিনি ড. বেনজীর আহমেদ। সাবেক বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। অনন্য ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীল ভাবনায় যিনি এগিয়ে। অবহেলিত বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন প্রাণ পেয়েছে তাঁর উদ্যমী স্পর্শে। দাবার পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত করেছেন দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীকেও। ড. বেনজীর আহমেদ এর হাত ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের ‘দাবা টুর্নামেন্ট’। পেশার চৌহদ্দি পেরিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রযাত্রায় তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়েও। এছাড়া দাবা খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যার ভূমিকা অপরিসীম তিনি হলেন, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহ সভাপতি নন্দিত ক্রীড়া সংগঠক
সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি: তরফদার মো: রুহুল আমিন । উনার অবদান অকল্পনীয় , তিনি আর্থিকভাবে সব ধরনের খেলাতে পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন।২০১৫ সালে চট্টগ্রামে শেখ কামাল ফুটবল ক্লাবকাপ চলাকালীন সময়ে ফেডারেশনের কোন পদে না থেকেও আমার বিশেষ অনুরোধে মি: তরফদার মো: রুহুল আমিন জাতীয় দাবা প্রতিযোযিগতায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন,যা আমাকে খুবই অনুপ্রানিত করেছে। এছাড়া ২০১৬ সালে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর দাবার উন্নয়নে প্রচুর পরিমানে আর্থিক সহযোগিতা করে চলেছেন । বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ট পুত্র শেখ রাসেল এর নামে একটি আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় ৫০ হাজার ডলার নগদ পুরস্কার প্রদান করে এক অনন্য ইতিহাস গড়েছেন, যা দাবার জন্য এক বিরল ঘটনা। মোদ্দা কথায় বলা যায়, আমাদের পুরো কমটির একান্ত সহযোগীতায় বাংলাদেশে দাবা খেলা আজ সবার নজর কেড়েছে । আগামী ২০ জুলাই পালিত হবে বিশ্ব দাবা দিবস। তাই দাবা নিয়ে আজকের লেখা ।
দাবা খেলার ইতিহাস:
যে দাবা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা বিশ্বজুড়ে সেই দাবার জন্ম ভারত উপমহাদেশে। খ্রিষ্টীয় সাত শতকে অর্থাৎ ১৪০০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে দাবা খেলা চালু হয়। তবে অন্যান্য দেশের মধ্যে এই খেলা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে রাশিয়ায়। ইউরোপে দাবার বিভিন্ন গুটির চাল পরিবর্তন হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে। তবে ইউরোপে দাবার যে রুপ অনুপ্রবেশ করে তা প্রায় ১৩৫০ বছর আগে পারস্যে খেলা হতো। ৬ষ্ট শতাব্দীর আগেই ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে গুপ্ত সম্রাজ্যের সময়কালে খেলাটি উৎপত্তি লাভ করে। লোক কথা অনুযায়ী লঙ্কেশ্বর মন্দোদরী রাবণকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার জন্য এই খেলার সূচনা করেন। কিন্তু দাবার মত একধরনের খেলার সন্ধান পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরে খিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে যার নাম ছিল শতরঞ্জ। ভারতবর্ষে চতুরঙ্গ নামক দাবা খেলাটির সূচনা হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই। তবে তখনও মুগ্ধ সম্রাজ্য বিরাজমান। সেই সময় দাবাকে চতুরঙ্গ বলার কারণ ছিল খেলাটিতে হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য এই চারটি অংশ ছিল। চতুর শব্দ থেকে “চতু” আগত বলে অনেকে ধারণা করে, যার অর্থ “বুদ্ধিমান”। তবে গ্রহণযোগ্য অর্থ হলো চার থেকে চতু, দিক থেকে অঙ্গ চতুরঙ্গ। প্রাচীনকালে দাবায় হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য এই চারটি অংশ ছিল। সেই থেকেও এই নামের উদ্ভভ বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু চতুরঙ্গ খেলাটা দাবা হয়ে উঠতে অনেক সময় চলে গেছে, পাড়ি দিতে হয়েছে সমুদ্র। পরবর্তী সময় ভারত থেকে খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে ইরানে। এরপর দাবা খেলা আসে দক্ষিণ ইউরোপে। আধুনিক দাবার শুরু হয় সেখানেই। ঐ সময় পারস্যের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিল দারুণ। পারস্যের বনিকেরা খেলাটি দেখেন এবং বেশ পছন্দ করে ফেলেন। এতে কয়েকজন বেশ শোরগোল করে নিয়মকানুন শিখেও ফেলে। পরবর্তীতে পারস্যে এই খেলার উন্নয়ন সাধিত হয় এবং চতুরঙ্গ নাম টা বদলে সেটি হয়ে ওঠে শতরঞ্জ। আসলে নাম টা বদলে গেছে বলাটা ঠিক যুক্তিযুক্ত হয় না। মুলত পারস্য বর্ণমালা তে ‘চ’ ও ‘গ’ না থাকায় সেটাই কালক্রমে ‘শ’ ও ‘জ’ তে পরিণত হয়। তবে প্রায় একই সময় ভারত থেকে খেলাটি চীনেও পাড়ি দেয়। চীনারা এই খেলার নামকরণ করে জিয়ানকি বা শিয়াংঝি যা কিনা দাবার ই আরেক নামান্তর। তবে চীন দাবি করে ‘ জিয়ানকি’ তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত একটি খেলা। শুধু তাই নয়, দাবা খেলাটাও নাকি ভারতে নয় চীনে ই উদ্ভাবিত হয়েছে। যদিও ইতিহাসবিদরা চীনের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পান নি। এরপর শতরঞ্জ পারস্য হতে পাড়ি জমিয়েছিল স্পেনে। সেই সময় স্পেনে ছিল মুসলিম শাসনামল। যার বদৌলতে পারস্য থেকে খেলাটি স্পেনে এসে শক্ত আসন গেড়ে বসে। তবে নামটা এখানে এসে বদলে যায় আরেকবার। এবার সেটা পর্তুগিজ ভাষায় হয়ে যায় “Xadrez”.গ্রিসে এসে আবার এর নাম হয়ে যায় ইয়াট্রিকিওন। ঊনিশ শতকের শেষ দিকে দাবার আধুনিক প্রতিযোগীতা শুরু হয়। সময়টা ১৮৫১ সালে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এটি আয়োজন করেন ব্রিটিশ দাবাড়ু হাওয়ার্ড স্টানটন। টুর্নামেন্টটিতে চ্যাম্পিয়ন হন ‘ অ্যাডলফ আন্ডারসেন। বিংশ শতাব্দীতে গঠিত হয় World Chesse Federation (FIDE).একবিংশ শতাব্দীতে দাবায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। ১৯৭০ সালে ১ম কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা একটি গেম বাজারে ছাড়া হয়। এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর অনলাইনে দাবা খেলা শুরু হয় ১৯০০ সালে মধ্য ভাগে। দাবায় সময়ের হিসাব শুরু হয় ১৮৮৩ থেকে। ১৮৮৬ সালে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা হয়। ধীরে ধীরে আরো আধুনিক হয়ে ওঠে এই খেলা। এই জনপ্রিয়তার কারণেই ১৯২৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ” দ্যা ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডেস চেস”(IFDI) গঠিত হয়।এই প্রতিষ্ঠান টি দাবা খেলার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংস্থা আন্তর্জাতিক দাবা খেলা প্রতিযোগিতার আয়োজক। দক্ষতার ওপর নির্ভর করে FIDE খেলোয়াড়দের ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার এবং গ্র্যান্ড মাস্টার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যেসব খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় সবার সেরা হয় তারাই গ্র্যান্ড মাস্টার। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫৯ টি দেশ FIDE এর সদস্য। বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন এই খেলায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। নিয়াজ মোর্শেদ বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার। তিনি ১৯৮৬ সালে গ্র্যান্ড মাস্টার হন। বাংলাদেশে পরবর্তীতে আরও ৪ জন গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছে। তারা হলেন জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, আবদুল্লাহ আল রাকিব, এনামুল হোসেন রাজিব।
বাংলাদেশে দাবা :
আমি প্রায় ৪০ বছর ক্রিড়াঙ্গনে অবদান রেখে চুুলেছি। ইতিমধ্যে শেষ হলো বিশ্ব কোয়ালিফাইড ৩.২ চ্যাম্পিয়নশীপ। এই সফলতাতে আমি অত্যন্ত গর্বিত। এই যে আমি দীর্ঘদিন ২০১২সালে ১ম ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে। এরপর ২০১৬ তে আমি জেনারেল সেক্রেটারির জন্য নির্বাচিত হই। তখন থেকেই আমি চেষ্টা করে চলেছি দাবার উন্নয়নের জন্য। বাংলাদেশে কিন্তু দাবার একটা বিরাট গৌরবের সময় ছিল। যেখানে আমাদের নিয়াজ মোর্শেদের হাত ধরে বহি:বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত লাভ করিয়েছিল। মাঝখান দিয়ে বিভিন্ন কারণে আমাদের এটা থেমে গিয়েছিল। থেমে যাওয়াটাকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য আমার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল দাবা অঙ্গনে। সেটা ২০১২ তে শুরু করেছি। ২০১২ সালে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলাম । এক বছরের জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছিলাম এবং ২০১৬ এর নিবার্চনে জেনারেল সেক্রেটারি নিবার্চিত হই। আজ অবধি আমি সেই পদেই আছি। এই আমার দীর্ঘদিনের যে অভিজ্ঞতা, ৪০ বছরের যে ক্যারিয়ার , স্পোর্টসের এই ক্যারিয়ারে আমি আমার চট্টগ্রাম মহামেডান স্পোটিং ক্লবে জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে একাধারে ৩৫ বছর। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন খেলায় আমি জড়িয়ে আছি। দাবা তে যখন এসেছি তখন আমি প্রথমেই চট্টগ্রাম জেলাতে দাবা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। তখনই মূলত আমার দাবার প্রতি একটা ভালোবাসা। স্পোর্টসের অন্যান্য ইভেন্টের মতো এক ধরনের দাবাতেও আমার বিশাল দূর্বলতা আসল এবং এই ইভেন্ট টা একটা সম্ভাবনাময় ইভেন্ট। এই থেকে আমি চিন্তা করেছি যে, এটার মধ্যে যদি আমি কাজ করি, আমার যে অভিজ্ঞতা তাতে আমি মনে করি যে , দাবাকে অনেকদূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। ২০১৬ তে যখন আমরা নিবার্চনে এসেছি, এই নিবার্চনে যে প্রতুশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমাদের জাতিকে , দাবা নিয়ে আমরা কী করতে চাই ? আমি মনে করি আমাদের ১ম যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশেষ করে ফেডারেশন গুলোতে যেমন আমরা মাসিক এবং বাৎসরিক একটা স্পোর্টস ক্যালেন্ডার সামনে নিয়ে আসি। আমরা যখন ২০০০ সালে ভারতে ১ম এসেছি , দাবার প্রথম সভাপতি ছিলেন আমাদের মাননীয় বানিজ্যমন্ত্রী । পরবতীতে আমাদের বর্তমান ড. বেনজির আহমেদ ডিএমপির কমিশনার হন। উনাকে সভাপতি করলেন সরকার। তখন থেকেই দাবাটা কিন্তু উন্নতির দিকে অগ্রগতি হলো। উনাকে আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছি আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে। উনিও দেখলাম অনেক আগ্রহী স্পোর্টস নিয়ে। তখন আমি সে সুযোগটা নিয়েছি। উনার কারনে আমি মূলত অনেক গুলো স্পন্সরের সাথে কথা বলতে পেরেছি । আমি এ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। আমাদের অনেক পরিচিত স্পন্সরকে নিয়ে আসতে পেরেছে ।
ছোট দেশ, ছোট দেশের মধ্যে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে সে গুলো আমাদেও মাননীয় প্রধানমনন্ত্রী ও আমাদের ক্রীড়ামন্ত্রী সমাধান করে থাকেন । আমাদের যে মাঠ দরকার, খেলার সরঞ্জাম দরকার । ভালো খেলোয়াদের জন্য যে তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়ার বাছাই করেও নিয়ে আসতে হয় , সেগুলোর পর্যায়ক্রম কিন্তু ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে দাবা খেলা স্কুল লেভেলে । আমরা দাবা ফেডারেশন এর সফলতার অনেক কিছুর উদাহরণ দিতে পারি । আমাদের একটি বড় স্পন্সর আবুল খায়ের গ্রুপ । আবুল খায়ের গ্রুপ এর স্পন্সরশীপে দাবা খেলা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ খেলায় এ গ্রুপের অবদান অনেক বেশী । তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করার জন্য গত বছর প্রায় ৪কোটি টাকার উপরে ব্যয় করেছি । বংলাদেশের প্রায় ৬৪জেলার প্রতিটি স্কুলে টুর্ণমেনট করতে পেরেছি । সে ক্ষেত্রে ৪০ হাজার খেলোয়ার স্কুল দাবাতে খেলেছে । সে সময় আমাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ চৌধুরী বাবলু ভাই প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা প্রদান করেছেন ।
প্রত্যেকটি ইভেন্টে যদি এভাবে তৃণমূল পর্যায়ে খেলােয়াড় উঠিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয় , আমরা যদি শুধুমাত্র ক্রীড়া মন্ত্রালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি তাহলে হবে না । আমাদের নিজস্ব কিছু উদ্যোগ নিতে হবে । যেমন আমাদের দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট যারা আছে মূলত সহ সভাপতি মি:চৌধুরী নাফিজ সারাফাত । মি:চৌধুরী নাফিজ সারাফাত জয়তু শেখ হাসিনা ২টি টূর্ণামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করেছেন । সেখানে আমরা অনেকগুলো বাইরের গ্রান্ড মাস্টার আনতে সক্ষম হয়েছি । আমাদের আর একজন সহ-সভাপতি আছেন যেমন সহ সভাপতি মি: কে এম শহীদুল্লাহ। তিনি শিশু কিশোর ইউনিয়ন পরিষদেও কাজ করেন। তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর হাতে দাবার পুরষ্কার প্রচলন করেন । অর্থাৎ আমরা টিম ওয়ার্ক এর মাধ্যমে দাবাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে চলেছি । আমরা মনে করি অন্যান্য ইভেন্টেও এক সাথে কাজ করি তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেথে পারবো । আমি মনে করি, শিশুর মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটাতে দাবা খেলাকে স্কুল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবা খেলার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তারা অনেক খারাপ কাজ থেকে সরে আসবে। স্কুল থেকে যদি দাবাড়ু তৈরি করা যায় তাহলে দ্রুতই আমরা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দাবার পড়াশক্তি হতে পারব।
সার্ক অঞ্চলের আটটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান) দাবা কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত ভোটে তিনি দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু ব্যক্তি মর্যাদার জন্য নয়, দেশের সুনামও অর্জনে সচেষ্ট হয়েছি ।
ক্রিকেট, ফুটবলে সরকারি-বেসরকারি নানা পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও দাবা ছিল তার ব্যতিক্রম। বুদ্ধির বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখা এই খেলাটির উৎকর্ষ সাধনে দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপকে যুক্ত যুক্ত করতে পেরেছি। ‘বাংলাদেশ স্কুল দাবা টুর্নামেন্টের’ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবুল খায়ের গ্রুপকে আহ্বান জানান বেনজীর আহমেদ। সাড়াও পান আশানুরূপ। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয় তাদের সঙ্গে। সেই সুবাদে প্রতিবছর ৭৭ লাখ টাকা করে পাবে দাবা ফেডারেশন।
২০১৩ সালে সর্বশেষ জাতীয় স্কুল দাবা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ৬ বছর পর স্কুল দাবার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। স্কুল দাবা ঠিকমতো করতে পারলে ভবিষ্যতে অনেক খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে বলে আমি করি। কিন্ করোনা মহামারির কারণে ‘স্কুল দাবা টুর্নামেন্ট’ স্থগিত রয়েছে।
ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, দাবা খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাসটেইনেবল পার্টনারশিপ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ করা হচ্ছে। দাবাকে ভালোবাসি এবং তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। ফাহাদ রহমান ও শিরিন সুলতানা নামে দুজন আইএম ছাড়াও বেশ কয়েকজন ফিদে মাস্টার বেরিয়ে এসেছেন। তাছাড়া প্রথমবারের মতো মহিলা দাবা লীগ হয়েছে। যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রথম।
‘আমরা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শিশু-কিশোরদের জন্য স্কুল পর্যায়ে দাবাকে জনপ্রিয় করে তুলতে চাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, মাঠে ময়দানে দাবাকে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
দাবায় খরচ কম ও চর্চার জন্য তেমন জায়গারও প্রয়োজন হয় না। ‘ফুটবলের একটা বুট কিনতেই প্রচুর টাকা লাগে। সেই বুটের টাকা দিয়ে সম্ভবত বিশটা দাবার কোর্ট কেনা যায়। এই বিশটা বোর্ড দিয়ে আমরা চলিশজনকে খেলাধুলায় জড়িত করতে পারব। দাবার চর্চার জন্য কোনো ধরনের আবহাওয়ার দরকার হয় না। স্কুলের বারান্দায় বসে কিংবা বাসায় বসেও খেলা যায়। দাবার মাধ্যমে আমাদের জাতিকে আবারো বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ হবে।’
‘দাবা চিন্তা শক্তির প্রসার ঘটায়। সেই সঙ্গে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, সাহস ও সক্ষমতা বাড়ায়। আমরা যদি দশ-বারো বছরের বাচ্চার মধ্যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিংয়ের ক্ষমতা বলিষ্ঠ করতে পারি, তাহলে সে যখন সমাজের সিদ্ধান্তদাতা হবে অবশ্যই ভালো কিছু করবে।’
দাবার বড় আসর:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় শুরু হয় ‘জয়তু শেখ হাসিনা’ আন্তর্জাতিক অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতা। দাবা ফেডারেশন এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। যেখানে দেশের গ্রান্ডমাস্টার ছাড়া ১৪ জন গ্রান্ডমাস্টার অংশগ্রহণ করেছে।
এতে প্রথম পুরস্কার ১২০০ ডলার, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮০০ ডলার ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫০০ ডলার দেওয়া হয়।
একই বছরের জুলাইয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ‘সজীব ওয়াজেদ জয় অনলাইন র্যাপিড দাবা টুর্নামেন্ট ২০২০’ আয়োজন করে দাবা ফেডারেশন। প্রতিযোগিতার প্রাইজ মানি রাখা হয়েছিল দেড় লাখ টাকা।
দাবার কথা বলতে গেলেই পাশে আবুল খায়ের গ্রুপ কথা বলতে হয়।
আবুল খায়ের গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহিদুল্লাহ, ‘দাবার প্রেসিডেন্ট মহোদয় (ড.বেনজীর আহমেদ) আমাদের অনুরোধে এগিয়ে এসেছে। আসলে ফেডারেশন আমাদের ‘স্কুল দাবার’ জন্য বলেছিল। কারণ দাবা ছোট্টবেলা থেকে যদি আয়ত্ত না করা যায় তাহলে তো কিছু হবে না। একটু বয়স হয়ে গেলে অনেক কিছু সম্ভব হয় না। তখন আমরা চিন্তা করলাম স্কুল দাবায় আসলেই অনেক বড় শিল্পগোষ্ঠীকে যুক্ত করা যাবে। কিন্তু করোনার জন্য স্কুল দাবার আয়োজন সম্ভব হয়নি।’
করোনায় দাবা খেলা থেমে যেন না থাকে এজন্য কাজ করছে আবুল খায়ের গ্রুপ। তখন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ‘ফেডারেশনকে আমরা বলেছিলাম ছয়টা টুর্নামেন্টে স্পন্সর করেছে।
‘দেশে খেলাধুলার উন্নয়ন ও প্রসারে আমরা সব সময় কাজ করছি । এরপর আমাদের কাছে চিন্তাভাবনা হলো ‘ফিজিক্যাল ফিটনেস’ থেকেও ‘মানুষিক ফিটনেস’ বেশি দরকার। তাছাড়া মনোবিকাশ, মেধার বিকাশ এটা ‘দাবাতে’ সম্ভব। এটাতে গরিব-ধনী যে কেউ ভালো করার সুযোগ আছে। আমাদের দেশে দাবার প্রসারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। যে কারণে সহজে কেউ আসতেও চায় না।’
ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্বগ্রহণের পর জোনাল চ্যাম্পিয়নশীপ, সার্ক ও গ্রান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টসহ মোট চারটি আন্তর্জাতিক মানের বড় দাবা টুর্নামেন্ট হয়েছে।
আমি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের উপদেষ্টা সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন করার পর ‘আমাদের বর্তমান সভাপতি দায়িত্বগ্রহণের পরে বিদেশে বয়সভিত্তিক যতগুলো খেলা আছে আমরা সবগুলোতে অংশগ্রহণ করেছি এবং আমরা নিজেদের খরচে তাদের বাইরে পাঠিয়েছি। কখনো কোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেইনি। এমনকি পকেট মানিও আমরা দিয়েছি। আগে আমরা কখনও বিদেশে কোনো বয়সভিত্তিক খেলোয়াড় পাঠাতাম না।’
সাংগঠনিকভাবে বিশ্ব দাবা সংস্থায় বাংলাদেশ সাংগঠনিক অবস্থা অনেক মজবুত করেছে। এছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপ এক মাস পরপর উচ্চ প্রাইজ মানি দিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে। এতে দাবার সম্মান বৃদ্ধি পাবে, আর এতে মানুষের আগ্রহও বাড়বে বলে মনে করছে ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তিরা।
‘চলতি বছর প্রিমিয়ার লীগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ ক্লাবের মধ্যে ১১টি ক্লাব বিদেশ থেকে গ্রান্ডমাস্টার, আইএম নিয়ে এসেছে। এতে একটা জমজমাট প্রিমিয়ার লীগ করতে পেরেছি। ড.বেনজির আহমেদ মহোদয়ের নির্দেশে আমরা সারা দেশে জেলা দাবা লীগ চালু করতে পেরেছি। শুধুমাত্র ওনার কারণে, ওনার নির্দেশে। আগে যেটা কখনও হয়নি। কোভিডের কারণে দেশের সকল ফেডারেশনে স্থিরতা আছে। কিন্তু আমরা একমাত্র ফেডারেশন যারা কোভিডের মধ্যে অনলাইন এবং অফলাইন মিলিয়ে বড় বড় আটটি টুর্নামেন্ট করে ফেলেছি।’
দাবা ফেডারেশনের এই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনে করি, ড.বেনজির আহমেদ মহোদয়ের ‘তাঁর একটা বড়গুণ উনি দাবাকে ভালোবাসেন এবং তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চান। আমাদের একটা আক্ষেপ ছিল আমরা গ্রান্ডমাস্টার, আইএম পাচ্ছি না কেন? কিন্তু ড. বেনজীর আহমেদের আমলে আমরা ফাহাদ রহমান ও শিরিন সুলতানা নামে দুজন আইএম পেয়েছি। এছাড়া বেশ কয়েকজন ফিদে মাস্টার পেয়েছি।’
লেখক : বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক,এশিয়ান জোনাল ৩.২ সভাপতি ও সিজেকেএস অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সৈয়দ শাহাবুদ্দীন শামীম।
আপনার মন্তব্য লিখুন