সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
এস এম ইরফান নাবিল :
তিন শতাধিক রোগীকে মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলে ডায়ালাইসিস সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (এনআইকেডিইউ) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পিপিপি সুবিধায় কাজ পাওয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যানডোর। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন চার সেশনে এ দুটি হাসপাতালে প্রায় তিন শতাধিক রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়। এই ডায়ালাইসিস সেবার জন্য নির্ধারিত মূল্য ২২৪০ টাকা। যার মধ্যে রোগীকে দিতে হয় ৪৬০ টাকা। এই হিসাবে তাদের কিছু টাকা সরকারের কাছে বকেয়া রয়েছে। সেই টাকা পেতে বিলম্ব হওয়াতেই হঠাৎ মুমূর্ষু রোগীদের ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল চমেক হাসপাতালের সামনেও। প্রতিবাদে স্বজনরা হাসপাতালের নিচতলায় এবং সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন। বোয়লখালীর পারভিন আকতার বলেন, ডায়ালাইসিস করাতে তিনি তার স্বামীকে নিয়ে সকালে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ডায়ালাইসিস হবে না। এ কারণে তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েন।তার স্বমীর শারিরিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। অন্যান্য রোগীর স্বজনরাসহ প্রায় ৪০ জনের একটি দল বিক্ষোভ করে। প্রায় ৫ ঘণ্টা সেখানে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ থাকার পর দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তা পুনরায় চালু হয়। জানা গেছে, চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিসের জন্য ৩১টি মেশিন রয়েছে। এতে চার শিফটে প্রতিদিন ১১০ জনের মতো ডায়ালাইসিস করতে পারেন।
চমেক কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিমেল আচার্য্য বলেন, আমাদের সেবা দিতে যেসব ওষুধ প্রয়োজন সেগুলো শেষ। আর ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি ইউনিটে ২৩ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এখন নতুন করে ওষুধ কেনার অর্থ নেই। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে হাসপাতালকে জানিয়েছি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ডায়ালাইসিস কেন্দ্রটি সরকার ভুর্তকি দিয়ে চালায়। বকেয়া টাকার বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে যোগযোগ করেছি। একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। স্যানডোরকে আমরা বিষয়টি বুঝিয়েছি। তারা আবারও সেবা দেওয়া শুরু করেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্যানডোরের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) নাজমুল আহসান জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে আমাদের ২১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। আমরা চাই না কোনো রোগী কষ্ট পাক। কিন্ আমরা নিরুপায়। টাকার অভাবে কাঁচামাল কিনতে পারছি না। আমাদের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে দুই হাসপাতালেই দুপুরের পর সেবা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্যানডোরের একটি বকেয়া বিল তাদের হাসপাতাল শাখায় আসে। বিলটি হাসপাতাল শাখা থেকে বাজেট শাখায় পাঠানো হয়েছে, তবে সেখান থেকে বিলটি ছাড় করাতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় স্যানডোর সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমিক দিয়েছিল। এর এক দিনের ব্যবধানে তারা সত্যিই সেবা বন্ধ করে দেয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড নামে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি ডায়ালাইসিসের জন্য চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। এনআইকেডিইউ ও চমেক হাসপাতালে প্রায় ২১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে দাবি করে গতকাল বুধবার সকাল থেকে উভয় হাসপাতালেই ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এনআইকেডিইউর ডায়ালাইসিস সেন্টারে এসে তালা মারা দেখতে পান অসংখ্য মুমূর্ষু রোগী। এ ঘটনায় দুপুর ১২টার দিকে শ্যামলী শিশুমেলাসংলগ্ন মিরপুর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার হানিফুল ইসলাম জানান, দুপুর ২টার দিকে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় অবরোধকারীরা সড়কের পাশে অবস্থান নেন। দুপুর আড়াইটা নাগাদ সড়কে থেমে থেমে যান চলাচল শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে এনআইকেডিইউ পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, স্যানডোর শুধু আমাদের হাসপাতালের রোগীদেরই ডায়ালাইসিস করে না, আরও একটি হাসপাতালেও তারা সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের কাছে তাদের কিছু বিল বকেয়া আছে, সেটি প্রসেসিংয়ের মধ্যে আছে। এখন তারা রোগীদের জিম্মি করে ডায়ালাইসিস সেন্টার তালা দিয়ে চলে গেছে। যে কারণে রোগীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এটিতো আমাদের হাসপাতালের কোনো সমস্যা নয়, স্যানডোর তালা মেরে চলে গেছে, এটা তাদের দায়। তারা বলছে, টাকা না পেলে ডায়ালাইসিস সেন্টার খুলবে না। আমরা তাদের বলেছি, টাকাটা প্রসেসিংয়ে আছে। সরকারি টাকা পেতে তো একটু দেরি হতেই পারে। এ জন্য সেবা বন্ধ করে দেওয়া অন্যায়। রোগীদের সেবায় এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, দুই-একজন জরুরি রোগীকে আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছি। পাশাপাশি কিছু রোগীকে অন্যান্য হাসপাতালে শিফট করে দেওয়া যায় কিনা সেটি আমরা দেখছি। কিন্ এভাবে সব রোগীর দায়িত্ব নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন