মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০১:১৪ অপরাহ্ন
দিনারুল আলম সম্রাট :
আগামী ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। যার অর্থ, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। আর নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্যের মতো বিভাগ থাকবে না।
২০২৩ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে গতকাল সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও অষ্টমের সমাপনীকে পাবলিক পরীক্ষা বলছি না। দেখা যাবে প্রাথমিক শেষে একটা সনদ পেল, ক্লাস এইট শেষে একটা সনদ পেল। তিনি বলেন, অষ্টমে বা পঞ্চমে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি; কিন্তু সেগুলো তো ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা, সেগুলো তো হবে, তাই না? ক্লাস সমাপনী শেষে তো মূল্যায়ন হবে। আমরা বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়নের দিক থেকে তাদের যেখানে যেখানে সনদ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সেখানে সনদ দেব।
অষ্টম আর পঞ্চমের সমাপনী থাকবে কিনা-এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমাপনী প্রতি ক্লাসেই থাকবে। শুধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরনের পরীক্ষা থাকবে না। তৃতীয় শ্রেণির পর থেকে সব ক্লাসেই সমাপনী পরীক্ষা আছে। তিনি বলেন, পঞ্চমে এবং অষ্টমেও আমরা সনদ দিয়ে দেব। সনদ দেওয়ার জন্য তো পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই।
পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা থাকছে কিনা-এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পিইসি-জেএসসি তো পাবলিক পরীক্ষা না। এগুলো ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, এখনই বলে দেওয়া যাবে না পরীক্ষা (পিইসি ও জেএসসি) হবে কি হবে না। তবে মূল্যায়ন হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। ২০২৫ সাল থেকে এই শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেওয়া হবে। অন্য শ্রেণিতে হবে সমাপনী পরীক্ষা, সমাপনীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সঙ্গে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। শিখন সময় কতটা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নেও গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিকে শেষে একটি সনদ পেল, ক্লাস এইট শেষে একটি সনদ পেল। তার মানে না যে প্রত্যেক ক্ষেত্রে সনদ দিতে হবে। আমি যদি ক্লাস শেষ করি সেখানেও তো সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে। সনদের জন্য শিক্ষা নয়, পারদর্শিতা নিশ্চিত করতে চাই। অষ্টম ও প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না এবং প্রতিটিতে সমাপনী পরীক্ষা হবে। সনদ দেওয়ার জন্য পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই। পিইসি এখনও ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি পাবলিক পরীক্ষা, বছর শেষে প্রতি ক্লাসে মূল্যায়ন হবে। দশম, একাদশ ও দ্বাদশে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছি, এইচএসসির পরীক্ষার রেজাল্ট হবে একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই রূপরেখা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক আলাদা আলাদা ছিল। একজন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিকে ঢুকে মাধ্যমিকে যাচ্ছে। এজন্য এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়া যেন খুব মসৃণ হয়, মাঝে যেন ছেদ না পড়ে, অন্য স্তরে গিয়ে যেন খাপ খাওয়াতে কোনো সমস্যা না হয়, সেটি আমরা দেখার চেষ্টা করেছি।
পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। গভীর শেখনে গুর“ত্ব দেওয়া হবে। মুখস্থ নিভর্রতার বিষয়টি যেন না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। এরপর শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটা যেন না হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। সাধারণত পাঁচ বছর পরপর শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। ২০২১ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়।
আপনার মন্তব্য লিখুন