বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন
এস এম ইরফান নাবিল:
গঠনতন্ত্র না মেনে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভাসহ চারটি ইউনিটে কমিটি দেয়ার ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে নিজেদের কমিটি হারিয়েছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। গত মঙ্গলবার রাত ২টায় বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগ এবং বাঁশখালী আলাওল সরকারি কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। রাত ২টায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন তার ফেসবুক পেইজে পরপর এই চার ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেন।
ঘোষণার মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ ঘোষিত চার ইউনিটের কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা ১৬ মিনিটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত পরপর দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে কমিটি বিলুপ্তির খবর পেয়ে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নানান জায়গায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ যেমন করেছে তেমনি কোথাও কোথাও পুড়িয়েছে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি বোরহানের কুশপুত্তলিকাও।
২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ল’ ট্যাম্পল কলেজের ছাত্র এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৪ মে এর প্রায় তিন বছর পর ২০২০ সালের ৪ মার্চ এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক ঠিক রেখে গঠনতন্ত্র অমান্য করে ২৭৬ সদস্যের দক্ষিণ জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ওই ঢাউস সাইজের কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। ওই কমিটিতে ছিল ৩৫ বছর বয়স্ক অছাত্র, বিবাহিত, রেলের খালাসি, শিবির ক্যাডার, হত্যা মামলার আসামি, কাপড়ের দোকানদার, সরকার বিরোধী জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের আসামি থেকে শুরু করে আন্ডার মেট্রিকও।
এরপর নানান অনিয়ম ও বাণিজ্যের অভিযোগ দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতার নামে। এসব অভিযোগের মধ্যে তারা পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, লোহাগাড়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটিও ঘোষণা করেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগ এবং বাঁশখালী আলাওল সরকারি কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পরপরই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দক্ষিণ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়।
বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি মো. তারেকুর রহমান নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গঠনতন্ত্র না মেনে ও একক সিদ্ধান্তে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি—সাধারণ সম্পাদক এতদিন কমিটি ঘোষণা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছিল। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়ও ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। যেসব কমিটি ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এরমধ্যে বেশিরভাগ কমিটিতে রয়েছে বিতর্কিত যুবকরা।
মিষ্টি বিতরণ : কমিটি বিলুপ্তির খবর পেয়ে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করার ঘটনা বিরল। কিন্তু গতকাল কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার পর পর বাঁশখালী উপজেলা সদরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এদিকে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতির বোয়ালখালী উপজেলায়ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বোয়ালখালীতে মিষ্টি বিতরন : দক্ষিণ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করায় বোযালখালীতে ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহানের কুশপুত্তলিকা দাহ, আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরে এসব কর্মসূচিতে উপস্তি ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুল আলম রাসেল, ছাত্রলীগ নেতা কুতুব উদ্দিন বাবর, শওকত আকবর, আহসান উল্লাহ, মোরশেদ আলম, লব চক্রবর্তী, সৈয়দ আরমান, সাদ নুর, মো. তারেক, সাজ্জাদ রিমন প্রমুখ।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় বলেন, বোরহান ছাত্রসেনার একজন পেছন সারির কর্মী ছিলেন। তাকে প্রয়াত এক নেতা সরাসরি দক্ষিণ জেলার সভাপতির পদে বসিয়ে দিয়ে আজ বৃহৎ এ সংগঠনটিকে ব্যবসায়ী সংগঠনে পরিণত করেছেন। দেরিতে হলেও জেলা কমিটি বিলুপ্ত করায় সাধারণ নেতাকর্মীরা স্বস্তি পেয়েছে। তারা বলেন, যেভাবে দক্ষিণ জেলার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে সেভাবে যেন উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়, সেই দাবিতে আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি।
পরে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে বোরহানের কুশপুত্তলিকা দাহ ও মিষ্টি বিতরণ করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। এসময় পুলিশ এসে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে।
আপনার মন্তব্য লিখুন