মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ৬৯তম জন্মদিন আজ । শেখ রেহানার ৬৯তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করেছেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ব দাবা সংস্থা জোন ৩.২ এর প্রেসিডেন্ট এবং দৈনিক সমর পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম। শেখ রেহানা ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাঁর দুই কন্যা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য নির্মমভাবে হত্যা করে, সেসময় শেখ রেহানা তার বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্ান করছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনিও পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা ধানমন্ডিতে গৃহবন্দী ছিলেন।
শেখ রেহানা যিনি ‘ছোটো আপা’ নামে পরিচিত, তার পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে একটি সাধারণ জীবনধারা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন।
তিনি প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিককে বিয়ে করেন এবং তাদের তিন সন্তান, তাদের মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
তাদের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর ট্রাস্টি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পাটির্র এমপি এবং কনিষ্ঠ মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তি লন্ডন ভিত্তিক কন্ট্রোল রিস্কস-এর গ্লোবাল রিস্কস এনালিসিস এডিটর হিসেবে কাজ করছেন।
শেখ রেহানা ১৯৭৯ সালে তার ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য প্রথম বিশ্বব্যাপী আহ্বান জানানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন।
সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম বলেন , শেখ রেহানা ১৯৭৯ সালে সুইডেনের স্টকহোমে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে নিহত জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম বিচারের আন্তর্জাতিক আহ্বান উত্থাপন করেন।
তিনি স্টকহোমে ১৯৭৯ সালের ১০ মে ইউরোপীয় দেশসমূহের প্রধান, জাতিসংঘ প্রধান এবং আন্তর্জাতিক এনজিও’র উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে একটি সর্ব-ইউরোপীয় বাকশাল সম্মেলনে বক্তৃতার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সেসময় শেখ হাসিনা দিলিতে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন সামরিক সমর্থিত বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য আওয়াজ তুলতে ইউরোপে থাকা তার ছোট বোনকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন।
সেই আবেগঘন ভাষণের মধ্য দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য তার কণ্ঠস্বর উত্থাপিত হওয়ায়- সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
শেখ রেহানার যেই চিঠি কখনো পৌঁছায়নি বঙ্গবন্ধু ও রাসেলের হাতে
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ব দাবা সংস্থা জোন ৩.২ এর প্রেসিডেন্ট এবং দৈনিক সমর পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম এক নিবন্দ্বে লেখেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে জার্মানি পৌঁছার পর ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বাবা ও ছোট ভাই শেখ রাসেলকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
চিঠিতে রেহানা তারা কীভাবে ভ্রমণ করছেন এবং কীভাবে সেখানে তাদের দিন কাটছে সেসব বর্ণনা করেছেন। কিন্ যাদের উদ্দেশে চিঠিটি লেখা হয়েছিল তাঁরা এ চিঠি কোনদিনও দেখতে পাননি। কারণ, চিঠিটি পৌঁছানোর আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর প্রায় পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
শেখ রেহানার ১০ বছর বয়সী ভাই শেখ রাসেল সাধারণত ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রাম নিতে চাইতো না। তাই রেহানা তার চিঠিতে ভাইকে তার স্বাস্যের যত্ন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং জার্মানির প্রকৃতি কতটা মনোরম ও সুন্দর তা বর্ণনা করেছিলেন।
তিনি চিঠির সঙ্গে কয়েকটি কার্ডও সংযুক্ত করেছিলেন। কিন্ চিঠিটি কখনই তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়নি। শেখ রেহানা ১৯৮৩ সালের ১২ আগস্ট সাপ্তাহিক চিত্র বাংলা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক ব্যতিক্রমী সাক্ষাৎকারে বেদনাদায়ক এ স্মৃতির কথা উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড থেকে রেহাই পেয়ে যান, কারণ তারা তখন জার্মানিতে ছিলেন।
এমনকি হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামে একটি কালো আইন জারি করায় দেশের রাজনৈতিক গতিপথকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দেওয়া এবং রাষ্ট্রকে পাকিস্তানি আদশের্র দিকে ঠেলে দেওয়ায় নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারও তারা চাইতে পারেনি।
ওই সাক্ষাতকারে রেহানা বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় ১৫ আগস্ট ওরা আমার জীবন কেড়ে নিয়েছে। আমি আমার বাবা, মা, আমার ভাইদের হারিয়েছি। আমি কীসের জন্য বাঁচব? রাসেলের কী দোষ ছিল? সে তো রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। আমার মাও ছিলেন না। কেন তারা তাদের মেরে ফেললো? আমি এতিম। আমি অসহায়। একজন কন্যা হিসেবে, একজন বাঙালি হিসেবে, আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করছি। আমি বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার চাই।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০২১ সালে শেখ রেহানার জন্মদিন উপলক্ষে দলটির যাচাইকৃত ফেসবুক পেইজে সাক্ষাৎকারটি শেয়ার করেছিল, যেখানে তিনি তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার পর থেকে যে শোক ও দুঃখ লালন করছিলেন তা প্রকাশ করেছেন।
রেহানা আরো বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। ফুলের নিচের সাপের মতো স্থানীয় দালালরাও জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে দেশের নেতাদের মধ্যে যে আওয়াজ তোলা উচিত ছিল, তা আশানুরূপ ভাবে হয়নি।’
যে খুনিরা গর্বিতভাবে তাদের কাজ শেষের ঘোষণা করেছিল তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয় এবং জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসের যে গৌরবজনক অধ্যায় তাতে নেমে এসেছিল সকরুণ নিস্তব্ধতা। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার জন্য দীর্ঘ ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
আপনার মন্তব্য লিখুন