মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
এস এম ইরফান নাবিল :
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দুপুর দেড়টায় হোটেল টাওয়ার ইন-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ ঘোষণা দেন তামিম। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বাংলাদেশের এই ড্যাশিং ওপেনার। তামিম বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য তামিম ধন্যবাদ দিয়েছেন সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যাঁরা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।’
অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তামিম।
তিনি বলেন, ‘জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।’
ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের।
কান্নাভেজা কণ্ঠে তামিম বলেন, ‘আমি সবসময়ই একটা কথা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য। আমি জানি না, এই ১৬ বছরে তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি।’
এরপর তামিম বলেন, ‘আমি আরও কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তার নাম আকবার খান, যার হাত ধরেই আমি প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলেছি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, তার কাছে আমি ঋণী।’
তামিম বলেন, ‘আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি আসলেই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কি না, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি যখনই মাঠে নেমেছি আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।’
ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ১৪টি এবং ফিফটি করেছেন ৫৬টি। টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি ৩১টি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। এই ফরম্যাটে দেশের হয়ে শুধু তামিমেরই সেঞ্চুরি রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি।
তামিমের বিদায়ে ক্রিকেটাঙ্গনে প্রতিক্রিয়া : কাঁদলেন, চোখ মুছে ফের কথা শুরু করলেন, খানিক বাদে আবার অশ্রু ঝরতে থাকলো চোখ থেকে- এভাবেই নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। দেশসেরা ওপেনারের বিদায়ে থমথমে অবস্থা বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায়। তামিমের অবসরে সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররাও।
হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামের একটি অভিজাত হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ব্যাট-প্যাড গুছিয়ে রাখার কথা জানান টাইগার অধিনায়ক। তামিমকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় টাইগার ক্রিকেটার মুমিনুল হক লিখেছেন, ‘প্রিয় তামিম ভাই, আপনি সবসময়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। আপনার অসামান্য সব অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। একজন সতীর্থ হওয়া ছাড়াও বড় ভাই হিসেবে সবসময় আমার পাশে ছিলেন। আমাদের সঙ্গে কাটানো দারুণ মুহূর্তগুলো আপনার অনুপস্থিতি অনুভব করাবে। আপনার জন্য শুভ কামনা আমার ভাই। সবসময় আপনাকে ভালোবাসি।’
তাসকিন আহমেদ লিখেছেন, ‘মাঠের ভেতরে এবং বাইরে আপনার সঙ্গে লম্বা একটা পথচলায় আমাদের অজস্র স্মৃতি জমেছে।
একজন ভাই এবং ক্যাপ্টেন হিসেবে আপনি যতখানি সহযোগিতা করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আপনাকে মিস করব তামিম ভাই।’
মেহেদী হাসান মিরাজ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে ১৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রানসহ জীবন্ত কিংবদন্তি! আমি তামিম ভাইয়ের কাছ থেকে খেলা এবং জীবন সম্পর্কে অমূল্য শিক্ষা পেয়েছি। সমর্থন, আমার ওপর বিশ্বাস এবং উৎসাহের জন্য আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। ঈশ্বরীয় গুণাবলী সম্পন্ন একজন মহান খেলোয়াড় আপনি। ক্রিকেট নিজে আপনাকে মিস করবে তামিম ভাই।’
তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘যখন ক্রিকেট বুঝতে শুরু করি, তখন থেকেই তামিম ভাইয়ের খেলা দেখতাম। অনেক ভালো লাগতো। ভাবিনি কখনো তামিম ভাইয়ের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হবে। আমার অভিষেক ম্যাচটাও তামিম ভাইয়ের অধিনায়কত্বে খেলেছি। আমি গর্বিত, একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলার সুযোগ হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনাকে অনেক মিস করবো তামিম ভাই।’
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন লিখেছেন, ‘লাল-সবুজ জার্সিতে আপনার সঙ্গে আর বাংলাদেশ দলে খেলা হবে না। এটা ভেবেই অনেক খারাপ লাগছে।’
রুবেল হোসেন লিখেছেন, ‘কান্নাভেজা চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। এভাবে বিদায় নেবেন, কখনো ভাবতে পারিনি। আপনাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। কী বলবো ভাই, কিছু বলার ভাষা নাই। আপনার জন্য সবসময় শুভ কামনা।’
সৌম্য সরকার লিখেছেন, ‘বিদায় বলা আমাদের জীবনের একটি অংশ। আসুন এটি নিয়ে দুঃখিত না হই; বরং ভালো স্মৃতিগুলোকে ধারণ করে সুন্দর ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থাকি। আপনি আমাদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি রেখে যাচ্ছেন। আমরা সবাই আপনাকে মিস করব। আপনার নতুন যাত্রা মঙ্গলময় হোক। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ তামিম ভাই।’
তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক এবং সাবেক ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে জানতাম না। হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত নিলে তো অবাক হওয়ারই কথা। আমি আসলে এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। সত্যি বলতে আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি।’
তামিমের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিসিবির ভাবনা কী? রাজ্জাক বললেন, ‘আমি আসলে জানি না, এটা ক্রিকেট বোর্ডের ব্যাপার। তামিমের কথা তো সে বলে গেছে। আমি অন্য কারো ব্যাপারে বলতে পারব না, তবে আমি এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না।’
আপনার মন্তব্য লিখুন