শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
এস এম ইরফান নাবিল :
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদ এমপি বলেছেন, আমি হয়তো সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি, তবে সবার সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করেছি। সবসময় দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কাজ করার চেষ্টা করে গিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, একটি ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। ‘ইতিমধ্যে যে লোক এ কাজ করেছে তা কেন করেছে আমার জানা নেই। সে লোকই আবার গতকাল ফেসবুকে আমার প্রশংসাও করেছে। আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। তার প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই বরং আমি তার নিরাপত্তা নিয়েই ভাবছি। তাকে পেছন থেকে হয়তো কেউ ইন্ধন দিচ্ছে। তবে অন্যায় কাজে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবুও আমার কোনও অন্যায় হয়ে থাকলে এবং তা প্রমাণ করতে পারলে আমি যে কোনও ধরনের শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। তাই আমি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ উপস্থাপনা কামনা করবো’। ১২ জানুয়ারি বুধবার বেলা-১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে সোমবার (১০ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামি মো. কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আইন বিষয়ক সহ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে মোছলেম উদ্দীন আহমদ বলেন, আমি মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে আমার নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ পোস্ট করলে তার দায় আমি নিব না। আমি মানুষ, রাজনীতি করতে গিয়ে চলার পথে ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। তবে এখন যে অভিযোগ উঠেছে, এ ধরনের কোনও অন্যায় কাজ আমি করিনি। গণমাধ্যমে নিউজ দেখে, আমি হতাশ হয়েছি। আমাদের ভুল নেই, সেটা বলবো না। দলীয় কিছু বিষয় আছে, যেগুলো জনগণের সামনে বলা যায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেন। মনোনয়নের ব্যাপারে আমাদের কোনও হাত নেই। আমরা শুধুমাত্র তালিকা পাঠাই। কমপক্ষে তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ৮ উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সভা করেছি। প্রত্যেক প্রার্থীর বক্তব্য নিয়েছি, শপথ করানো হয়েছে। মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে, এ ধরনের ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে। জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দপ্তরে তালিকা প্রেরণ করা হয়। কোন কোন ইউনিয়নে ৬/৭ জনের তালিকাও দেয়া হয়েছে এবং আমাদের পাঠানো তালিকার বাইরেও কেন্দ্র হতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমাদের মনোনয়ন দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
জামায়াত নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লা চৌধুরীর মনোনয়নের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, মুমিনুল হকের ছেলে রুহুল্লাহর নাম আমরা পাঠাইনি। আমরা পাঁচজনের নাম পাঠিয়েছিলাম, কেন্দ্রে অনেকের নাম পাঠানো না হলেও সেখানে যুক্ত করেছে। কেন্দ্র থেকে যারা মনোনয়ন ফরম নিয়ে থাকে, তাদের নামও যুক্ত করা হয়ে থাকে অনেক সময়। জামায়াতের সাথে রুহুল্লার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে দলীয় সভানেত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী।
কামালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আহক্ষান জানিয়ে মোছলেম উদ্দীন আহমদ বলেন, এই সমস্ত ঘটনা কে করেছে, তার পিছনে অন্য কেউ কাজ করছে কি-না সেটা নজর দেওয়ার জন্য আহক্ষান জানাই। এই ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের আহক্ষান জানাই। আমি ঘটনার সঙ্গে বিন্দুমাত্র জড়িত নই। কেউ কামালকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে আমার ধারণা। কামালে সাথে আমার দেখা ও সাক্ষাত হয়নি। কামাল উদ্দিন সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দিয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন।
সিআরবিতে হাসপাতালের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট, সরকার যেটা করে, সেটা সমর্থন করা স্বাভাবিক। আবার কারও বিরোধিতা করার অধিকার রয়েছে। আমরা কোন পক্ষে, তার জন্য আমাদের বর্জন করে নিউজ ছাপানো হবে না, সেটা আমাদের ওপর অবিচার। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী, আমি তার পক্ষে থাকবো। আমি সরকারের অংশ, এটাই স্বাভাবিক।
এক প্রশ্নের জবাবে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, কামাল উদ্দীন আর আমি একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি কখনও বলেননি-আমি মনোনয়ন চাই। যেহেতু হোসেন কবির উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তিনি মামলা করেছেন। পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হোসেন কবির ও কামালের মোবাইল পরীক্ষা করলে সেটা বের হয়ে আসবে। কামাল সবসময় সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে থাকে। সে কতটা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ, আপনারা চিন্তা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ ইদ্রিস, বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: নুর“ল আলম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ত্রাণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ হায়দার শাহীন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা: তিমির বরণ চৌধুরী, উপ দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ডা: আ ন ম মিনহাজুল আবেদীন, দেবব্রত দাশ, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুর“ল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, বোয়ালখালী পৌরসভা মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হার“ন লুবনা, আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম, রেজাউল করিম বাবুল, নুর“ল আবছার হিরা, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী কল্পনা লালা, জান্নাত আরা মঞ্জু, খালেদা আক্তার চৌধুরী, জীবন আরা বেগম, শামীম আরা বেগম, চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোনাফ, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম, চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, চেয়ারম্যান ইনজামুল হক জসিম, চেয়ারম্যান কাজল দে, চেয়ারম্যান শামসুল আলম, চেয়ারম্যান, রনবির ঘোষ টুটুন, চেয়ারম্যান এহেসানুল হক, চেয়ারম্যান শফিউল আজম শেফু, পৌর কাউন্সিলর তারেকুল ইসলাম তারেক, মো: সিরাজুল হক, আরিফ উদ্দিন জুয়েল, সুনিল ঘোষ, ইসমাইল হোসেন আবু, হাজী নাছের আলী, মাহমুদুল হক, মো: জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর রেবেকা সুলতানা মনি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন, বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল মোনাফ মহিন প্রমুখ।
আপনার মন্তব্য লিখুন