বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন
মুহম্মদ ওমর ফারুক:
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সোমবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
হিজরি বষের্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এই মর্যাদাপূর্ণ রাতে মহান আলাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম কর“ণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করবেন মুসলমানরা।
করোনা মহামারির কারণে গত বছর মসজিদে না গিয়ে মুসলিদের ঘরে বসে ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে এবার এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত তাৎপর্যের দাবিদার। এ রাতে রিজিক ও সম্পদ বণ্টন করা হয়। হায়াত বাড়ানো কিংবা কমিয়ে দেওয়া হয়। মধ্য শাবানের রাতে বেশি বেশি করে নফল ইবাদত করা উচিত। নিজের ঘরে নফল ইবাদত করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ঘরে নফল ইবাদত করেছেন। ইবনে মাজাহ ও বায়হাকির হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ এ রাতে প্রথম আসমানে চলে আসেন এবং মানুষকে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোনো পাপী আছে কি, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে কেউ আছে কি, আমার কাছে রিজিক চাইবে, আমি তাকে রিজিক দান করব। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ আছে কি, আমার কাছে রোগ থেকে মুক্তি চাইবে, আমি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দেব। এভাবে আল্লাহ তায়ালা সুবেহ সাদিক পর্যন্ত বান্দাকে ডাকতে থাকেন। তখন যে কেউ যে কোনো প্রার্থনা করবে তা-ই কবুল করা হবে।’
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। ইসলামী শরিয়তে শাবান মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। শাবান গুনাহ থেকে রক্ষা করে, রমজান মানুষকে পবিত্র করে। শাবানকে বলা হয় রমজানের আগমন ঘোষণাকারী মাস। হজরত উসামা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এক দিন আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ (শাবান) মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলাম। তিনি উত্তরে বললেন, লোকেরা রজব ও রমজান এ দুই মাসের গুরুত্ব বেশি দেয় এবং রোজাও রাখে। কিন্তু মধ্যবর্তী এ মাসটিকে উপেক্ষা করে চলে। অথচ এ মাসেই বান্দার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হয়। আমার কামনা হলো আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করার সময় আমি রোজা অবস্থায় থাকি। এ কারণেই আমি শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখি।’ মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, আবু দাউদ। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) তার ‘গুনিয়াতুত তালিবিন’ গ্রন্থে বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, শবেবরাতসহ চারটি রজনিতে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর মানুষের জন্য তাঁর রহমতের দরজাগুলো খুলে দেন। ১৪ শাবান সূর্যাস্ত থেকে ১৫ শাবান ফজর পর্যন্ত তাঁর বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা খোলা থাকে। এ রাতের ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। জিবরাইল (আ.) একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি উঠুন, নামাজ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। কারণ এটি ১৫ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য ১০০ রহমতের দরজা খুলে দেন। আপনি আপনার উম্মতের জন্য দোয়া করুন। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখ।’ দেখুন সুনানে ইবনে মাজাহ।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
আপনার মন্তব্য লিখুন